সমাজ সংস্কারে ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকর এর অবদান অনসীকার্য। সমাজের বৈষম্যঃ , ভেদাভেদ ও অন্যায় এর বিরুধী তার সংগ্রাম সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
তিনি ১৮৯১ সালে মধ্যপ্রদেশ এর মঃ এ একটি দলিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। সেই সময় এ ভারতবর্ষে বর্ণ ভিত্তিক জাতিভেদ প্রথা ছিল ব্যাপক। তিনি প্রাথমিক জীবনে সমাজের নোংরা অস্পৃশ্যতা , অবমাননা এবং কুসংস্কার এর শিকার হন। কিন্তু তিনি সমাজের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতি শিকার না করে , শিক্ষা কে হাতিয়ার করে এই অন্যায় এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষা এমন একটি অস্ত্র যেটি সারা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।
সমাজ থেকে নোংরা জাতিভেদ প্রথা শেষ করে দেয়ার জন্য সারাজীবন লড়াই করে ছিলেন।
ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো তিনি ভারতের সংবিধান তৈরিতে তার ভূমিকা। স্বাধীনতার সময় ভারত প্রায় সামাজিক , ধর্মীয় এবং ভাষাগত ভাবে বিভক্ত হয়ে গেছিলো। এই মহান বৈচিত্রময় দেশে বৈচিত্রময় জাতিকে একত্রিত করার কঠিন কাজটি তিনি করেছিলেন। তিনি ধর্ম , জাতি এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার , সমতা এবং স্বাধীনতার নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় সংবিধানে একটি গুরুপ্ত পূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তার মহান দৃষ্টি ভঙ্গি ছিলো যে সারা ভারতবর্ষে প্রত্যেক মানুষ সমান মর্যাদা ও স্বাধীনতার সাথে বসবাস করতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪ ( আইনের সামনে সবাই সমান এবং সবাই রক্ষা করবে আইন ), অনুচ্ছেদ 15 (ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ) এবং 17 অনুচ্ছেদ (অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ) এই অনুচ্ছেদ গুলি সামাজিক ন্যায়বিচার কে নিশ্চিত করে।

তিনি নারীর অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন। শুধু যে তিনি নারীর শিক্ষা ও সমতা রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন তা নয়। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার রক্ষার জন্য তিনি হিন্দু কোড বিল পাশের অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।
পৃথিবীর মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে সমস্ত বিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেটে ডিগ্রী অর্জন করে ছিলেন। কলোমবিয়া ইউনিভার্সিটি এর তালিকা অনুযায়ী পৃথিবীর সেরা একশো জন পন্ডিতের মধ্যে তিনি একজন।
তার অর্থনৈতিক ধারণা ছিল যুগান্তকারী। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরী করা যেখানে অর্থনৈতিক অসমতা এবং সুবিধা বঞ্চিতদের উন্নতিতে সাহায্য করবে। হিল্টন ইয়ং কমিশনে তাঁর দেয়া প্রস্তবনা থেকেই ভারতীয় রিজভ ব্যাঙ্ক গঠিত হয়।
ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরের শিক্ষাগুলি রাজনৈতিক , আইন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সামের জন্য আন্দোলনগুলিকে অন্যায় এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে। তার বিখ্যাত উপদেশ “শিক্ষিত, আন্দোলন, সংগঠিত করুন” ভবিষৎ প্রজন্মকে সমাজের জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করে।